শিরোনাম
Passenger Voice | ০২:১২ পিএম, ২০২০-০৮-১৮
নিজস্ব প্রতিবেদকঃ মোহাম্মদ আবুল কালাম। দেশের শীর্ষ শিল্প প্রতিষ্ঠান টিকে গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ এর ব্যাবস্থাপনা পরিচালক। সততা ও দক্ষতা দিয়ে প্রতিষ্ঠিত করেছে টিকে গ্রুপ।চট্টগ্রামের সুনামধন্য এই ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে হঠাৎ বাংলাদেশ রেলওয়ের কৃষি লিজে নেওয়া জমিতে স্থায়ী স্থাপনা নির্মাণ করে রেলের জায়গা দখলের অভিযোগ উঠেছে। টিকে গ্রুপ অতীতের ন্যায় সততার পরিচয় দিয়ে রেলের জমিতে কৃষি কাজ করতে পারতেন যদি এমনটাই করতেন প্রতিবাদের জন্য রেলের কেউ এগিয়ে আসতো না। হটাৎ রেলের জমিতে স্থায়ী স্থাপনা নির্মাণ করে বানিজ্যিক ভাবে ব্যাবহার করায় প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে আঙ্গুল তুলছে বাংলাদেশ রেলওয়ের কর্মকর্তারা। কৃষি লিজের জায়গায় বানিজ্যিক স্থাপনার তৈরি করায় সে দিকে নজর দিয়েছে তারা।
বাংলাদেশ রেলওয়ের সূত্র ধরে প্যাসেঞ্জার ভয়েসের প্রতিবেদক সরেজমিন গিয়ে দেখে রেলের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী আবুল কালাম রেলের কৃষি লিজের জমিতে স্থায়ী স্থাপনা নির্মাণ করেছে। সেখানে দেয়াল নির্মান করে বাউন্ডারি দিয়ে তৈরি করা হয়েছে স্থায়ী পানির পাম্প। বিভিন্ন ধরনের বানিজ্যিক কাজে ব্যাবহার যোগ্য মেশিন পরে আছে মাটিতে। বানিয়েছে ট্রাক চলাচলের রাস্তা। এমনকি অভিযোগ আছে বানিজ্যিক কাজে ব্যাবহার যোগ্য মেশিন বসানোর জন্য করা হচ্ছে পাইলিং। পুকুরের পাশে দেখা যায় টিনের বেড়া দিয়ে ভেতরে নির্মাণ করেছে পানির পাম্প। সেখানে কর্মরত প্রতিষ্ঠানটির গার্ড মনিরের সাথে কথা হলে তিনি জানান এখান থেকে কারখানায় পানি সাপ্লাই দেওয়া হয়।
বাংলাদেশ রেলওয়ের সাথে টিকে গ্রুপের কৃষি লিজের চুক্তিপত্রের ৪ নম্বর শর্ত অনুযায়ী উক্ত জমিতে যে ফসলাদি জন্মে তাহার চাষাবাদ ছাড়া অন্য কোনো কাজ, যেমন বসবাসের নিমিত্তে কোনো ঘর দরজা তৈরি, দোকানপাট নির্মাণ, বৃক্ষাদি রুপন বা বাগান করা, পুকুর গত নালা বা খাল খনন, রাস্তাঘাট, মসজিদ,মন্দির, শ্মশান,কবরস্থান অথবা অন্য কোনো কাজের জন্য নির্মানাদি অথবা ওই জাতীয় অন্য কোনো কাজে এই ভূমি ব্যাবহার করা যাবেনা। যদি এই শর্তের লঙ্ঘন হয় তখন রেল প্রশাসন লাইসেন্স বাতিল করে এবং ক্ষয়ক্ষতির ক্ষতিপূরণ আদায়ের অধিকারও রাখেন। অথচ বিদ্যমান আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করে টি কে গ্রুপ এই জায়গার ওপর নির্মাণ করেছে বেশ কিছু স্থায়ী স্থাপনা।
তবে এদিকে বাংলাদেশ রেলওয়ে মনে করে যদি আবুল কালাম কৃষি লিজ না নিয়ে বানিজ্যিকভাবে লিজ নেন তাহলে যেমন দেশের রাজস্ব আয় হয় তেমনি তার ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ডে কারো কোনো হস্তক্ষেপ করার সুযোগ থাকেনা।
বাংলাদেশ রেলওয়ের নথি নং: ডিইও/৩৯৫- কৃষি/কুমিরা/০৫/৭৪৭/৩৬১/এ তা: ৩০/০৩/০৫ ইং পর্যালোচনা করে দেখা যায়, কুমিরা স্টেশন এলাকায় কি:মি: নং- ২৩/২ হইতে ২৩/৪ এর মধ্যে রেল লাইনের পশ্চিম পার্শ্বের ১.৩৩ একর জমিটি দুই প্লোটে বিভক্ত - যার একটি ৪৮,৪২০ বর্গফুট এবং অপরটি ৯,৬০০ বর্গফুট। স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায় বর্তমানে এই এলাকায় শতক প্রতি জমির মূল্য পাঁচ লক্ষ্য টাকা অনুযায়ী এই জমির মূল্য আনুমানিক ৬ কোটি ৬৫ লক্ষ্য টাকা। ১৯৯৯ থেকে ২০০৩ পর্যন্ত বিনা অনুমতিতে এই জমি অবৈধ দখলে রাখে টি কে গ্রুপ। পরে অবৈধ দখলে থাকা পাঁচ বছরের ৭,৯৮০ টাকা ক্ষতিপূরণ দিয়ে ২০০৫ সালে কৃষি কাজে ব্যবহারের জন্য রেলওয়ে থেকে লাইসেন্স গ্রহন করে টিকে গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল কালাম।
চট্টগ্রাম রেলওয়ে বিভাগীয় ভূসম্পত্তি দপ্তরের আরেকটি সূত্র বলছে চট্টগ্রাম বিভাগে ডিইও দপ্তরের অধীনে বানিজ্যিক, কৃষি ও মৎস্য চাষের জন্য মোট ৭৯২৯টি লাইসেন্স ইস্যু করে ১৫৯৩.২৮ একর ভূমি লিজ দেওয়া হয়েছে। যা থেকে রেলের বাৎসরিক খাজনা আদায় হয় ৪ কোটি ৫৪ লক্ষ্য ৫৬ হাজার ৫১৫ টাকা। এছাড়াও চট্টগ্রাম সিআরবি দপ্তর থেকেও বিভিন্ন সংস্থাগুলোকে ভূমি লিজ দেওয়া হয়ে থাকে।
একটি পরিসংখ্যানে দেখা যায় ১.৩৩ একর ভূমি কৃষি লিজে নিলে প্রতি বছর খাজনা পরিশোধ করতে হয় ৩ হাজার ৯৯০ টাকা। তবে কুমিরা এলাকার দিকে একই পরিমান ভূমি যদি বানিজ্যিক ভাবে রেল থেকে লিজ নিতে হয় তাহলে রেলকে দিতে হবে বাৎসরিক ৯ লক্ষ ২৬ হাজার ৯৫৭ টাকা। ২০০৫ থেকে কৃষি লিজ নেওয়া জমির ওপর টি কে গ্রুপ সরকারকে রাজস্ব দেয় ৫৯ হাজার ৮৫০ টাকা। যদি একই পরিমান জমি টিকে গ্রুপ বানিজ্যিকভাবে রেল থেকে লিজ নিতো তাহলে সরকার রাজস্ব পেতো ১ কোটি ৩৯ লক্ষ ৪ হাজার ৩৫৫ টাকা। বাংলাদেশ রেলওয়ের প্রতি বছর গড়ে ১৩০০ কোটি টাকা লোকসান হলেও বানিজ্যিক লিজ দেওয়া যায় এমন জমি গুলোকে কৃষি লিজ দিয়ে রেলকে ক্ষতিগ্রস্থ করছে রেলের কিছু অসাধু কর্মকর্তারা।
প্যাসেঞ্জার ভয়েসের অনুসন্ধানে জানা যায় রেলের কিছু সংখ্যক অসাধু কর্মকর্তাদের বিভিন্নভাবে ম্যানেজ করে বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠান এই কাজ গুলো করে থাকে।
লিজ দেওয়ার পর মাঠ পর্যায়ে ভূমি তদারকি করার দায়িত্ব থাকে আমিন কানুনঙ্গোরা। অভিযোগ আছে তাদের কে মাসিক মাসোহারা দেওয়ার কারণে সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোতে তারা সঠিক তথ্য পৌঁছায় না।
রেলওয়ে বিভাগীয় ভূ সম্পত্তি অফিসের আরেক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, মূলত রেলের কাছ থেকে কৃষি লিজে জমি নিয়ে চারদিকে বাউন্ডারি নির্মাণ করে খাজনা পরিশোধ করা বন্ধ করে দেয় ভূমি দখলকারীরা। পরে রেল উচ্ছেদ করতে গেলে হাইকোর্টের আশ্রই নিয়ে মামলা ঠুকে নিয়ে নেয় এস্টে অর্ডার (স্থগিতাদেশ)। পরে ভোগ করতে থাকে বিনা খরচে। জনবল সংকট, উচ্ছেদের খরচ ও এস্টে অর্ডারের কারণে আর পদক্ষেপ নিতে পারেনা রেলওয়ে, আর এভাবেই বেহাত হয়ে যায় রেলের কোটি টাকার সরকারি সম্পত্তি। হয়তো টিকে গ্রুপ ও একই কাজ করতে পারে।
এ বিষয়ে টি কে গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ এর ব্যাবস্থাপনা পরিচালক আবুল কালামকে বারবার ফোন করা হলে তিনি কল রিসিভ করেননি।
তবে প্রতিষ্ঠানটির জেনারেল ম্যানেজার আব্দুল কাদের প্যাসেঞ্জার ভয়েসকে বলেন, আমরা রেলের কোন জায়গা দখল করিনি আপনি আমাদের উকিলের সাথে কথা বলেন।
রেলওয়ে চট্টগ্রামের বিভাগীয় ভূ সম্পত্তি কর্মকর্তা (ডিইও) মাহবুবুল করিম প্যাসেঞ্জার ভয়েসকে বলেন, লাইসেন্সের শর্ত ভঙ্গ করে রেলের জমিতে অন্য কোনো কাজ করার সুযোগ নেই। এরকম হলে আমরা লাইসেন্স বাতিল করে দিবো।
এ বিষয়ে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রধান ভূ সম্পত্তি কর্মকর্তা (সিইও) কংকন চাকমা প্যাসেঞ্জার ভয়েসকে বলেন, আমি বিষয়টি দেখছি।
গত দশ বছরে রেলের জনবল নিয়োগ সেবা মান উন্নয়নের জন্য ব্যয় হয়েছে এক লাখ কোটি টাকার বেশি। রেলের উন্নয়নে ২০১৩ সালে একটি মাস্টার প্ল্যান করা হয় যেখানে ২ লাখ ৩৩ হাজার ৯৪০ কোটি টাকা ব্যয়ে ২৪ হাজার ছোট বড় প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। বিগত ছয় বছরে রেলের উন্নয়নে ব্যয় হয়েছে আনুমানিক ত্রিশ হাজার কোটি টাকা। বাজেট বাড়ানোর পরও লোকসান বাড়তে থাকে রেলে, গেলো চয় বছরে রেলের আনুমানিক লোকসান দাড়ায় সাত হাজার কোটি টাকা। ২০১৯ সালে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) রেল সেবা নিশ্চিত করণে এবং রেলে দুর্নীতি বন্ধ করতে ১৭টি সুপারিশ দিয়েছে রেল মন্ত্রণালয়কে। দুর্নীতি যে উৎস গুলো তুলে ধরা হয়েছে তার মধ্যে শীর্ষ স্থানে রয়েছে জলাশয় লিজ দেওয়া, রেলের জমিতে অবৈধ স্থাপনা, রেলের শত শত একর জমি বেহাত।
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত 2019 - 2024 PassengerVoice | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সম্পূর্ণ বেআইনি এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ
Developed By Muktodhara Technology Limited.